
অকারণ অপবাদে, অনৈতিক আক্রমণে এবং অসম্মানে পরাস্ত বীরশ্রেষ্ঠ
দশানন। লঙ্কাধীশ। এ-কাহিনি এক কল্পিত নায়কের, যিনি মহাকাব্যে দুর্বৃত্ত
হিসেবে অঙ্কিত, অথচ সেই কাব্যের অলিতে-গলিতে পড়ে আছে তাঁর মহৎ
হৃদয়ের মণিমাণিক্য। ইতিহাস কিংবা প্রচলিত মহাকাব্যের সঙ্গে এ-রচনার
সাদৃশ্য একেবারেই কাকতালীয়। এ-কাহিনি আসলে সেইসব মহাকাব্যিক চরিত্রের, যারা আদতে নিতান্তই মানুষ ছিলেন। একিইসাথে কত কত হাজার
বছর আগেও এই উপমহাদেশের রাজনৈতিক পটভূমি, তার দ্বন্দ্ব, তার সভ্যতা
ও সংস্কৃতির আগ্রাসন প্রায় একই রকম ছিল। ঠিক এই সময়ে দাঁড়িয়ে
আমরা যেমন অসহায়ভাবে মেনে নিচ্ছি প্রতিদিনের এই ক্ষমতার আস্ফালন
ও অত্যাচার, একই ভাবে কত হাজার বছর আগে এক প্রজাজনপ্রিয় নৃপতি
তাঁর বিরুদ্ধে ঘনিয়ে ওঠা চক্রান্তের মুখ�োমুখি হয়ে অনুভব করেছিলেন,
লোভের চেয়ে বড়ো কোনো চালিকাশক্তি হয়না। যে শক্তিতে ভর করে
তাঁর সাম্রাজ্য গ্রাস করতে এসেছে উত্তরাবর্তের আর্য রাজ ও ব্রাহ্মণ্য শক্তি।
অথচ তাঁর পিতা ছিলেন নক্ষত্রসমান যশস্বী সপ্তর্ষির এক ঋষি পূলস্ত্যর পু
ত্র।
মাতা অবশ্য পূর্বদেশীয়। গাঙ্গেয়। রক্ষকুলজাতা তাড়কার কন্যা। মাতৃকুল
অনার্য । নৃপতি দক্ষিণে তাঁর রাজ্যে সুখে ছিলেন। কিন্তু তাঁর সোনার লঙ্কা
যে চক্ষুশূল হয়ে দাঁড়িয়েছে উত্তরাবর্তের এই ক্ষাত্রব্রাহ্মণ শক্তির কাছে!
এ গল্প সেই রাজার গল্প। এ গল্প বিষাদের। এ গল্প সেই নারীদের যারা
পু
রুষতন্ত্রের কাছে অক্ষম হয়েও আপন স্বভাবে শ্রদ্ধেয়। এ গল্প সেই
কিশোরেরও যে নিজের অজান্তে এক চক্রান্তের ক্রীড়নক হয়ে গেলো।
এ-রচনা সেই নিরুপায় মানুষদের উদ্দেশে উৎসর্গীকৃত।
— অনিন্দিতা মণ্ডল
