বাঁশবেড়িয়া প্রাচীন নাম বংশবাটী নগর জীবনের ব্যস্ত কোলাহল থেকে। দূরে , হুগলী জেলার উত্তরে ভাগীরথী বা হুগলী নদীর তীরে অবস্থিত একটি প্রাচীন শহর। বন্দর সপ্তগ্রামের অন্যতম এই জনপদটি ঐতিহাসিক, সাংস্কৃতিক দিক থেকে অত্যন্ত ঋদ্ধ। টেরাকোটা শিল্প সমৃদ্ধ অনন্ত বাসুদেব মন্দির বা বিষ্ণুমন্দির, আনন্দময়ী মন্দির,শ্রীধর কথকের কালী মন্দির, সর্বোপরি জগত বিখ্যাত মা হংসেশ্বরী মন্দির আজও তার সাক্ষ্য বহন করে চলেছে। অপর দিকে এই শহরের সাথে অঙ্গাগী ভাবে যুক্ত পার্শ্ববর্তী ত্রিবেণী র জাফর খাঁ গাজী দরগা, বেণী মাধবের মন্দির,সহ মুক্তবেণীর ঘাট গুলিও ঐতিহাসিক এবং প্রাচীনত্বের সাক্ষ্য বহন করে চলেছে।
সংস্কৃত শিক্ষার চর্চায় এই অঞ্চল নবদ্বীপকে অতিক্রম করেছিল। এখানকার পন্ডিত রামশরণ তর্কবাগীশ,মাধব ন্যায় লঙ্কার,রামরাম ভট্টাচার্য,মদনমোহন তর্করত্ন,পন্ডিত জগন্নাথ তর্কপঞ্চানন এর খ্যাতি সমগ্র ভারতবর্ষে ছড়িয়ে পড়েছিল। বাংলা,বিহার,অসম সহ বিভিন্ন প্রান্তের ছাত্ররা এখানে ন্যায়,দর্শন,স্মৃতি, অলঙ্কার, ব্যাকরণ,কাব্য বিষয়ে পাঠ গ্রহণ করতে আসতো। শ্রুতিধর পন্ডিত জগন্নাথ তর্কপঞ্চানন ' বিবাদ ভঙ্গার্ণব ' রচনা করে চির অমর হয়ে আছেন। পরবর্তী কালে দেবেন্দ্রনাথ এখানে ব্রাহ্ম বিদ্যালয় স্থাপন করে ছিলেন। ডিরোজিয়ান বাবু রামগোপাল ঘোষ এই অঞ্চলের সন্নিকটে নিজ গ্রামে উচ্চ ইংরেজি বিদ্যালয় স্থাপন করে প্রথাগত শিক্ষার ধারা টিকে বহমান রেখে ছিলেন। ঊনবিংশ শতাব্দীর গ্রন্থাগার গঠনের ভাবনায় ১৮৯১ সালে রাজা ক্ষিতিন্দ্র দেব রায়ের
উদ্যোগে বাঁশবেড়িয়া পাবলিক লাইব্রেরী স্থাপিত হয়। পরবর্তী কালে বিপিন বিহারী দে, মনীন্দ্র নাথ রুদ্র, অমূল্যধন মুখোপাধ্যায়,
তিনকড়ি দত্ত,বিষ্ণুচরণ মুখোপাধ্যায়,কুমার মুনীন্দ্র দেব রায় প্রমুখ মানুষের হাত ধরে অবিভক্ত বঙ্গে গ্রন্থাগার আন্দোলনের সূত্রপাত।