
KALIGUNIN O CHHOY RAHASHYA (Bengali, Paperback, Soumik Dey)
ধানগাছের আগার দিকেই যেমন শষ্যদানাটুকুর অবস্থান, তেমনি কোনও মলাটবাঁধা বইয়ের মূল পরিচিতি কিন্তু তার ভূমিকাটুকু। আমরা দেশী বা ভিনদেশী ভৌতিক সাহিত্যগুলিতে ভয়ের বা গা ছমছমে গল্প হয়তো বহুবারই পড়েছি, কিন্তু ভূত কিম্বা ভয়ঙ্কর প্রেতযোনীর সঙ্গে কূটবুদ্ধির দাবা খেলে তাকে নিজের ফাঁদে ফেলার মতো গল্প খুবই বিরল। কালীগুণীন কিন্তু নিজের তীক্ষ্ণ মেধা এবং উপস্থিত বুদ্ধি দিয়ে প্রত্যেকবার সেইটাই করে আসছেন। তারপর দ্বিতীয় কথাটি হলো তাঁর আবির্ভাব। যখন অপশক্তির হাতে জীবনীশক্তি পরাস্ত হতে আরম্ভ করে, যখন অশরীরী অপদেবতার হিংস্র থাবা গ্রাস করতে থাকে একের পর এক গ্রাম, তালুক, শহর, ঠিক তখনই কোনও না কোনও উপায়ে সেখানে আবির্ভূত হন পিশাচের যম, অপশক্তির সাক্ষাৎ শমন কালীপদ মুখুজ্জে ওরফে কালীগুণীন। তারপর নিজের অসামান্য তন্ত্রবিদ্যার শক্তি এবং উপস্থিত বুদ্ধিকে কাজে লাগিয়ে বের করে ফেলেন চতুর ও ধূর্ত প্রেতাত্মার বধের উপায়। তৃতীয় ব্যাপারটি হলো এই গল্পগুলির ভাষা শৈলী। ছেলেবেলার হারিয়ে যাওয়া পুরাতন বাঙলা, যে ভাষায় আমরা বিভূতিভূষণের লেখা পড়ে বড়ো হয়েছি, যে ভাষায় ঠাকুরমার মুখে গল্প শুনে ঘুমিয়েছি, সেই ভাষাকে লেখক আরও একবার ফিরিয়ে এনে হাজির করেছে এই ইঁট কাঠ পাথর কংক্রিটের জঙ্গলে। ঘুমপাড়ানি গানের সুরে যে ভাষা কানে কানে গল্প বলে। শহুরে প্রেক্ষাপটে ভয়ের বা ভূতের গল্প আমরা যথেষ্ট পড়ি, কিন্তু গ্রামবাংলার বর্ষাকালের ব্যাঙ আর ঝিঁঝিঁ ডাকা রাতে তেলের বাতির টিমটিমে আলোর পরিবেশে সেই ভয় কিন্তু একেবারেই আলাদা রূপ ধারণ করে। শহরের পিচে মোড়া রাস্তার চেয়ে পাড়া গাঁয়ের কাদা মাখা ঘুটঘুটে অন্ধকার পথ কিন্তু হাড়ে হাড়ে কাঁপুনি ধরায়। সেই সময়কার হারিয়ে যাওয়া সেই পল্লীগ্রামের আস্বাদ আবার ফিরে পেয়েছি কালীগুণীনের গল্পগুলির মাধ্যমে।
