
কাকে বলে ধ্রুপদি সাহিত্য ? তা কি কেবল এক বিশেষ সময়সীমাবেষ্টিত রচনামালা ? কোন বিশেষ সময় চিহ্নিত হবে ধ্রুপদিকাল হিসেবে ? তা কি পুরাণের কাল, নাকি ইতিহাসের বেলা ? আমরা জানি, নির্দিষ্ট কালোসীমা কোনো সাহিত্যের বিচারলক্ষণ হতে পারে না। তার অনেকানেক বৈচিত্র্য আছে। প্রাচীন সময়ে লেখা হয়েছে বলেই মঙ্গলকাব্যকে আমরা ধ্রুপদি সাহিত্য বলি না। কিন্তু, চৈতন্যচরিতামৃত অনায়াসেই ধ্রুপদি সাহিত্যের মহিমা পায়। অথচ, তা মঙ্গলকাব্যসমূহের চেয়ে অর্বাচীন। বিদেশি সাহিত্যেও এমন উদাহরণ আছে। চসার ধ্রুপদি সাহিত্য কিনা, তা নিয়ে বিতর্ক থাকলেও, শেকসপিয়র নিয়ে তেমন বিতর্কের অবকাশ নেই। যদি পৃথিবীর সাহিত্যকে আমরা এক পরিব্যাপ্ত আকাশ বলে ভেবে নিই, তাহলে দেশে-দেশে সেই অনন্ত আকাশে যেমন আছে প্রখর রবিকিরণ শশীশোভা, তেমনই হয়েছে অজস্র নক্ষত্র, কেউ উজ্জ্বল কেউ স্তিমিত। এই গ্রন্থ যেন সেই গগনের মতো অসীম রহস্যময়। বলা যায়ই, নক্ষত্রখচিত, চিরন্তন, ধ্রুপদিপুঞ্জের এক অভূতপূর্ব সমাহার। এই গ্রন্থ সর্বোতভাবে তুলনামূলক সাহিত্যে এক বিস্তৃত প্রতিভাস। হোমার থেকে দান্তে থেকে ভার্জিল থেকে লিয়ার থেকে বালজার্ক থেকে মার্সেল প্রুস্তের রচনার মাহাত্ম্য নির্ণয় যদি এই গ্রন্থের সীমানা হয়, তাহলে তারই মাঝে সিংহাসন পেতে দিতে হয় বাণভট্ট বা রবীন্দ্রনাথের জন্য। পাশাপাশি অবশ্যই ফুটে ওঠে দীপ্ত নক্ষত্রের মতো শেকসপিয়রের মিরান্দা, কালিদাসের শকুন্তলা, রবীন্দ্রনাথের নন্দিনীরা। সংকলিত ভলতেয়র, মাইকেল, রবীন্দ্রনাথের বিচারসূত্রও। সব মিলে, এই বই বাংলায় লেখা এক চিরকালীন আন্তর্জাতিক মহাগ্রন্থ।
