
বাঙালী মাত্রেই শাক্ত অথবা বৈষ্ণব । বৈষ্ণব ধর্মের বীজ শাক্ত ধর্মে বা তন্ত্রাচারে।
শুধু তাই নয় ভারতীয় ধর্মসাধনার মূল কাণ্ড তন্ত্র নির্ভর। বাঙালীর জীবনধারার
পরিক্রমার পথেই তন্ত্রের উদ্ভব । তন্ত্র প্রধান অঞ্চল বলতে বোঝায় অঙ্গ, বঙ্গ,
কলিঙ্গ, প্ৰাগজ্যোতিষপু
র। বৌদ্ধ তন্ত্রের আবির্ভাব বঙ্গের চন্দ্ৰদ্বীপে আজ যা
বাখরগঞ্জ নামে পরিচিত। তন্ত্র সম্পর্কে বাঙালীর ধারণা শুধু অশ্রদ্ধেয় নয়, তন্ত্র
অসামাজিক এবং পঞ্চ ম-কার সাধনার মাধ্যমে ব্যভিচারের মাধ্যম! সত্য কথা
এই তন্ত্র সম্পর্কে এসব ধারণা অজ্ঞানতা– প্রসূতার পথ ধরে গড়ে উঠেছে।
বর্তমান বাঙালীর ধারণায় তন্ত্র জটিল অনাচরণীয় ধর্ম। এসব ধারণা
যাদের মধ্যে প্রসার লাভ করেছে তাদের কাছে তন্ত্র একমাত্ৰ ভৈরব ভৈরবীর
গুহ্যাচারের ধর্ম । তারা খ�োঁজ রাখেন না তন্ত্র হাজার দুয়ারের প্রাসাদ। ভৈরব
ভৈরবী সাধনা তার নির্ধারিত একটি প্রকোষ্ঠ মাত্র। তন্ত্রাচার বহুবিধ, নানা
শাখায় প্রশাখায় বিভক্ত। এক পথে এক একজন সাধনা করে থাকেন । যার
ভৈরব ভৈরবী রূপে সাধনা করেন তাদের বলা হয় বীরাচারী। এসব আচরণ
সবার পালনীয় নয়। অথচ বাঙালীর প্রচলিত ধারণায় তন্ত্র সাধনা মানেই এক
রকম যৌন ব্যাভিচারের সুযোগ !
তন্ত্রশাস্ত্রে বিভিন্ন বিভাগ আছে। তবে প্রধানত আগম, ডামর, যামল ও তন্ত্র।
তবে আগম, নিগম, যামল তন্ত্র সংহিতাকে সাধারণতঃ সমার্থক শব্দরূপেই
তন্ত্রশাস্ত্র ব্যবহার করা হয়। সাধারণভাবে এগুলির মধ্যে পার্থক্য নির্ণয় করা
হয় না। বিশ্বসার তন্ত্রে কথিত আছে সৃষ্ টি প্রলয় দেবতাদের যথাবিধি অর্চনা
সকল মন্ত্রের সাধনার মধ্যে নিহিত আছে।আবার তান্ত্রিক মন্ত্রে তান্ত্রিক ঐতিহ্য
অনুসার তিনটি ধারা স্বীকৃত হয়— দক্ষিণ, বাম ও মধ্যম।
বাঙ্গলায় তান্ত্রিক ধর্ম আলোচনার পূর্বে একটি প্রবাহকে মনে রাখতে
হয়, যথা—
“গৌড়ে প্রকাশিতা বিদ্যা মৈথিলে প্রকটীকৃতা।
ক্বচিৎ ক্বচিৎ মহারাষ্ট্রে গুর্জরে প্রলয়ংগতা।।”
তন্ত্র আসলে কি? সে কি শুধুভয়াল? সে কি শুধু আদিভৌতিক কিছুক্রিয়াকলাপ?
নাকি শরীরবৃত্তি য় এক গূঢ় ভয়ংকর সাধনা?
উত্তর দেবে এই বই।
হয় মন্ত্রের সাধন নয়ত শরীর পাতন।
