আমরা হতবাক হয়ে লক্ষ করলাম, বামাবোধিনী-র মতো আলোকিত পত্রিকায় পাঁচ বছর ধরে ধারাবাহিকভাবে প্রকাশিত হয়েছে যে ভ্রমণকথা— তার লেখিকার নামটি কখনো প্রকাশিত হয়নি। এত যুগ পরে রচনাটি পুনরুদ্ধার করতে গিয়েও সে নাম আমাদের কাছে অজানাই রয়ে গেল।
‘বনবাসিনীর পত্র’ উনিশ শতকের কাশী-বৃন্দাবনে পরিবার-পরিজন-বাসভূমি থেকে বিচ্ছিন্ন অগণিত যে সকল বিধবা সেকালে এক অর্থে বনবাসে দিন কাটাতেন, তাঁদেরই একজনের মর্মকথা। তাঁর ভ্রমণের পৃথিবী অতীব সীমিত, তাঁর সঙ্গিনী তাঁরই সমতুল আরেক অবদমিত নারী। নিশ্চিত করে তা জানা না গেলেও সাধারণ ঘরের সেইসব বিধবা যাঁরা ঈশ্বর আর পরস্পরের নির্ভরতায় দূরপ্রবাসে নিজেরাই থাকতেন, অনায়াসেই তাঁদের মুখপাত্র হয়ে উঠেছেন লেখিকা। মধুবন, কুমুদবন, বহুলাবনে “অজর অমর অশোক আনন্দ” অর্জনের প্রলেপ আসলে তাঁদের নিজেদের আহত স্বরে সুরারোপের মরিয়া চেষ্টা। এই ক্ষীণতনু, অতীব মূল্যবান বইটি দিয়েই সূচনা হল আমাদের ‘একদা ভ্রমণে’ গ্রন্থমালাটির।