ITI BHABANI PATHAK (Bengali, Novel, Devsenapathy Nandi, Paperback)

Rs. 250.00 Rs. 200.00
Tax included.

amazon paymentsamerican expressapple paybitcoindankortdiners clubdiscoverdogecoindwollaforbrugsforeningeninteracgoogle payjcbklarnaklarna-pay-laterlitecoinmaestromasterpaypalshopify paysofortvisa
Description
পূবের আকাশের দিকে কিয়ৎক্ষণ তাকালেন ভবানী, মিশমিশে কালো অন্ধকার আকাশের বুক থেকে একটি একটি করে নক্ষত্র অস্পষ্ট হয়ে মুছে আসছে.....গাঢ় কালো রঙ ঘোলাটে হয়ে লালচে আভার স্পর্শ পূর্বাকাশে। যেন ওই আকাশের কপালে কেউ রক্তচন্দনের টিকা এঁকে দিয়েছে; একটু পরেই ওই পথে সাত অশ্বের রথে চড়ে বিজয়যাত্রায় বের হবেন দিবাকর। ভবানী গুহার বাইরের একটা চওড়া পাথরের ওপর বসে ওই আকাশের দিকে চোখ রেখে খানিক নিজের মনেই যেন বলে উঠলেন, "ওই আকাশটা দেখছো রঙ্গরাজ? চারিপাশে ঘন অন্ধকার, একফোঁটা আলোর রেখা অব্ধি নেই.....তবু তারই মাঝে ওই একবিন্দু লাল বিজয়তিলক; ওও তো মিথ্যে নয়। সর্দার; ওই একবিন্দু লালরঙ উজ্জ্বল হয়ে ছড়িয়ে যেতে যেতে একসময় গোটা আকাশটা আলোয় আলো হয়ে যাবে! আর তিলমাত্র অন্ধকার থাকবেনা। ঠিক সেভাবেই.....আজ আমরা মাত্র কয়েকজন এই লড়াইটা শুরু করেছি! কিন্তু দেখো; একদিন এই বিদ্রোহ বাংলা বিহার উড়িষ্যার গণ্ডি ছাড়িয়ে গোটা ভারতবর্ষে ছড়িয়ে যাবে। আমার এই দুখিনী দেশমায়ের জীর্ণ হতদরিদ্র ঘরে ঘরে একেকজন মজনু; একেকজন ভবানী; একেকজন রঙ্গরাজ তৈরি হবে। সেদিন ওই আকাশটার মতই আর কোনো অন্ধকার থাকবেনা হে সর্দার! আমার শুভঙ্করী দেশমাতৃকা ভয়ঙ্করী হয়ে দশহাতে দশ অস্ত্র ধরে অসুরদলন করবে।'' রঙ্গরাজের হাতের মশালের গাঢ় হলুদ আলো হু হু করে কাঁপছে ভবানীর মুখে; এক অদ্ভুত আলো অন্ধকার খেলা করছে সেই কঠিন মুখে। ছাইচাপা আগুনের মত দুই চোখে মশালের শিখাগুলোর প্রতিচ্ছবি ধিক ধিক করছে! রঙ্গরাজ হাহাকারের স্বরে বললো, "আর কবে ঠাকুর? এভাবে আমরা কয়েকজন বছরের পর বছর লোকচক্ষুর অন্তরালে লুকিয়ে থেকে কিভাবে পরিবর্তন আনবো? আর এই দেশের মায়েরা? হা হা! হাসালেন ঠাকুর! তারা প্রতিদিন প্রতিমুহূর্তে ঘরে বাইরে নির্যাতিতা হচ্ছে.....সংসারে তো বটেই; এছাড়াও যবন, ইংরেজ, মগ আরাকান হার্মাদ শয়তানেরা সুযোগ পেলেই তাদের তুলে নিয়ে যায়! বলপূর্বক ছিঁড়ে খায়, কলমা পড়িয়ে নিকাহ করে, সুদূর মরুভূমির দেশের যবনদের হাতে বিক্রি করে....আরও কত কিছু!! আশি বছরের ঘাটের মড়ার সঙ্গে পাঁচ বছরের দুধের শিশুর বিয়ে; আটবছরের মধ্যে মেয়েকে বিয়ে দিয়ে শ্বশুরবাড়ি না পাঠাতে পারলে সে মেয়ে নাকি অরক্ষণীয়া! তার ওপর দুদিন বাদে সে বুড়ো বর এমনিতেই মরবে....তখন নাচতে নাচতে বরের সঙ্গে ওইটুকু মেয়েকে চিতেয় তুলে দিয়ে গয়নাগাটি যা কিছু লুটেপুটে নেবে ওই ভণ্ড বামুনের দল। থুঃ; ঘেন্না ধরে গেলো ঠাকুর!'' শেষের দিকে গলা ধরে আসছিলো রঙ্গরাজের; মাটিতে শব্দ করে থুতু ফেললো ও। ভবানী ঠাকুরের মুখমণ্ডল অভিব্যক্তিহীন, থমথমে....ঝড় আসার আগের থমকে যাওয়া বাতাসের মত। চোয়াল শক্ত, চোখদুটো যেন মশালের আলোয় ধ্বক ধ্বক করে জ্বলছে। ধীরে ধীরে ফিসফিসে কন্ঠে কেটে কেটে বললেন তারপর , "সপ্তকোটি কন্ঠ খলখল নিনাদ করলে, দ্বিসপ্তকোটি ভুজৈর্ধৃত খরকরবালে, অবলা কেন মা.....এত বলে! অবলা কেন মা.....এত বলে!!!'' শেষের প্রশ্নগুলো যেন মাথার ওপরের খোলা আকাশে আর চারপাশের পাহাড়ি বনাঞ্চলের বুকে ছুঁড়ে দিলেন তিনি। পূব আকাশ ধীরে ধীরে গোলাপি হয়ে আসছে তখন, সূর্যের প্রথম রশ্মি উঁকি দিয়েছে আঁধারের বুক চিরে.....দূরে কোন মসজিদ থেকে ভেসে আসছে সালাত আল ফজরের আজানের সুর....।
('ইতি, ভবানী পাঠক' এর কিয়দাংশ)